প্যারীসুন্দরী দেবী

প্যারীসুন্দরী দেবী বাংলার নীল বিদ্রোহের নেত্রী। তৎকালীণ নদিয়া জেলার কুখ্যাত নীলকর টমাস আইভান কেনীর বিরুদ্ধে কৃষক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।

প্যারীসুন্দরী দেবীর পরিচয়

কুমারখালী ইংরেজ রেশম কুঠিরের নায়েব রামানন্দ সিংহের কণিষ্ঠ কণ্যা প্যারীসুন্দরী। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছিলেন। অল্প বয়সে প্যারীসুন্দরী দেবীর বিবাহ হয় কৃষ্ণনাথ সিংহের সাথে। অল্পদিনের মধ্যে নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন।

জমিদারি লাভ

প্যারীসুন্দরীর পিতা রামানন্দ সিংহ মুর্শিদাবাদ নবাব কুঠিরে কাজ করার সময় বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুরে জমিদারীর পত্তন করেন। রামানন্দ সিংহের পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি অর্ধেক জমিদারীর কণ্যা প্যারীসুন্দরী ও অর্ধেক অপর কণ্যা শ্যামাসুন্দরী (মতান্তরে ব্রজসুন্দরী) কে দান করেন। প্যারীসুন্দরী ছোটবেলা থেকে বাবার জমিদারী দেখভাল করতেন।

নীলকর বিদ্রোহের নেতৃত্ব

তৎকালীণ নদীয় জেলার মাটি নীল চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় ইংরেজ নীলকরেরা এই জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে কুঠি স্থাপন করে নীল চাষে কৃষকদের বাধ্য করেন। শালঘর মধুয়া কুঠির নীলকর কেনী আমলা সদরপুরে প্যারীসুন্দরী দেবীর চাষীদেরকেও নীলচাষে বাধ্য করেন। কেনী সাহেবের অত্যাচারে তার প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। প্রজারা প্রতিকার চেয়ে প্যারীসুন্দরীর কাছে প্রতিকার চেয়ে আরজি জানাতে থাকে।
প্রজাবৎসল প্যারিসুন্দরী কেনী সাহেবের সমুচিত জবাব দিতে চাষীদের নিয়ে বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। জমিদার প্যারিসুন্দরীর নেতৃত্বে তার লাঠিয়াল বাহিনী ও সাধারণ প্রজারাদের নিয়ে কেনী সাহেবের সালঘর মধুয়া কুটি আক্রমণ করেন। কেনী সাহেব পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও দারোগা মহম্মদ বক্স প্রদাদের হাতে খুন হন।

কেনীকে পরাজিত করে প্যারিসুন্দরী কুঠি লুট করেন। বাঙ্গারী মেয়ে হয়ে ইংরেজ কুঠি লুট করার বিষয়টি তিনি গর্ব ভরে প্রচার করতে থাকেন। কেনী সাহেব এই অপমানের প্রতিষোধ নিতে প্যারিসুন্দরীকে জ্যান্ত ধরতে পারলে সহস্রমুদ্রা পুরুস্কার ঘোষণা করেন। কেনীর ঘোষণার জবাবে প্যারীসুন্দরী ঘোষণা করেন “যে কেনীর মাথা এনে দিতে পারবে তাকে সহস্যমুদ্রা পুরুস্কার দেওয়া হবে”।

মামলা

কুঠি লুট ও দারোগা মহম্মদ বক্সকে খুনের জন্য কোম্পানী প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে কোম্পানী তার জমিদারী অধিগ্রহণ করে। দীর্ঘদিন মামলা লড়ে প্যারীসুন্দরী জয়লাভ করে জমিদারি ফিরে পেলেও ততদিনে ঋনে জর্জরিত হয়ে পড়েন। ফলে বেশ কিছু সম্পত্তি তাকে পত্তনি বন্দবস্ত করে দিতে হয়। অবশিষ্ট সম্পত্তি পালক পুত্র তারিণীচরণ সিংহ কে দিয়ে দেন।

প্যারীসুন্দরী দেবীর মৃত্যু

১৮৬০ সালে প্রজাদরদী, স্বদেশপ্রাণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত প্যারীসুন্দরী দেবীর মৃত্যু হয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ এক অবিস্মরণিয় ঘটনা। যার কারণে ইংরেজ সরকার নীল চায়কে আইনের আওতায় আনতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর সেই নীল বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় এক অসম সাহসী নারীর নাম জড়িয়ে আছে।

আরও পড়ুন
প্যারীসুন্দরী দেবী

3 thoughts on “প্যারীসুন্দরী দেবী”

  1. Pingback: কুষ্টিয়ার ৮ বিপ্লবী | Kushtiainfo

  2. Pingback: কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস | Kushtiainfo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top