শিলাইদহ ভ্রমণ
শিলাইদহ ভ্রমণ। কুষ্টিয়া জেলায় সবচেয়ে আকর্শনীয় ভ্রমন স্থান রয়েছে কুমারখালী উপজেলায়।
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার, বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠি বাড়ী, মধ্যযুগের অন্যতম মুসলিম সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তভিটা, কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের এম এম প্রেস এমন অসংখ্য ভ্রমণ স্থান রয়েছে কুমারখালী উপজেলায়। কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ভ্রমণ নিয়ে এই নিবন্ধ।

শহরের দক্ষিণদিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক দিয়ে ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে আলাউদ্দিন নগর মোড় হয়ে উত্তর-পূর্বদিকে ৪ কিলোমিটার গেলে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি।
রাস্তায় আলাউদ্দিন নগরে একটু বিরতি দিয়ে দেখেনিতে পারেন শিল্পপতি দানবীর আলাউদ্দিন আহম্মেদের প্রচেষ্টায় স্থাপিত শিক্ষাপল্লী। কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কৃষি কলেজ, বিপিএড কলেজ কি নেই সেখানে। গ্রামের নাম চোড়াইকোল হলেও একজন ব্যক্তির পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচীর কারণে গ্রামের নামটিই পরিবর্তন হয়ে আলাউদ্দিন নগরে পরিণত হয়েছে। গ্রামের মধ্যে রাস্তার পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লী পার্ক’ রয়েছে।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর অদূরে পদ্মা নদীর ধারে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত ঠাকুর স্টেটের কাচারি বাড়ী। এখানে বসে কবিগুরু বহু কবিতা, গল্প, গান রচনা করেছেন। কাচারি হিসাবে ব্যবহুত দ্বিতল ভবণটি অজত্ন অবহেলা ও পরিচর্যার অভাবে জরাজির্ণ হয়ে পড়েছে। দোতলায় উঠার সিঁড়ি ও পূর্বদিকে একতলার ছাদ ভেঙে পড়েছে। কর্মচারীদের থাকার বিল্ডিংটি পরিত্যাক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় কয়েকবছর পূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ভেঙে ফেলা হয়েছে । পোষ্ট মাষ্টার গল্পের পোষ্ট অফিসটির চিহ্নও খুজে পাওয়া যায় না।
হাতে সময় থাকলে পূর্বদিকে ১ কিলোমিটার গিয়ে দেখে আসতে পারেন খোরশেদপুর বাজার সংলগ্ন প্রাচীর ঘেরা ১৯৩৫ সালে রাণী ভবানীর পতি রামকান্ত রায় প্রতিষ্ঠিত শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেব বিগ্রহ মন্দির। নির্মাণ আর স্থাপত্য নিদর্শনের এক অপূর্ব সৃষ্টি গোপীনাথ মন্দিরের স্থাপত্য কারুকার্য কাছ থেকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর শিল্পনৈপূণ্য কত মাধুর্যময়। ফেরার পথে বাজারের পশ্চিম পাশে কাঠ মিস্ত্রী আব্দুর রশীদ জোয়ার্দারের তিল তিল করে গড়ে তোলা কাঠের পাঁচতলা বাড়ীতে ঢুঁ মারতে পারেন।

ফেরার পথে কি দেখবেন?
সড়ক সেতুর টোল প্লাজার সামনে বড় সাইনবোডে চোখে পড়বে ‘বিশ্বের অন্যতম ট্রাজেডি গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা কালজয়ী অমর কথাশিল্পী যুগশ্রেষ্ঠ মীর মশাররফ হোসেন এর জন্মভিটা’। রাস্তা হতে ৫০০ মিটার দক্ষিণে কবির জন্মভিটা দেখে নিতে পারেন।
এবার শহরে ফেরার পথে দবির মোল্লার রেলগেট হয়ে উত্তর দিকে গ্রামের পথ দিয়ে কিছুদূর গেলে বাউল সম্রাট লালন শাহের মাজার বা লালন আখড়া। বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, চলন-বলনের লালন ভক্তদের দর্শন, লালন মিউজিয়াম দর্শন ও লালন ভক্তদের গাণ শুনে বাড়ী ফেরার কথা ভূলে যেতে পারেন।
লালন আখড়া হতে শহর কিন্তু প্রাচীর টপকানো দূরুত্ব। মাজারের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বের হয়ে কুষ্টিয়া ফেরার পথে প্রেথমেই পড়বে একসময় উপমহাদেশের সর্ববৃহত বস্ত্রকল মহিনী মিলের সাইনবোর্ড। বন্ধ মিলের ভেতর প্রবেশ করতে না পারলেও বাইরে থেকে মিলের অবকাঠামো, আশপাশের প্রচুর পুরাতন বাড়ীঘর চোখে পড়বে।
মহিনী মিল শেষ করেই প্রায় এর উক্তর প্রাচীর ঘেষে চোখে পড়বে লাল রঙের দোতলা একটি ছোট্র বাড়ী যার প্রাচীর দেখে মনে হবে এর বড় ভার্ষণ কোথায় দেখেছেন। জ্বি, ঢেউ খেলানো প্রাচীর ঘেরা দ্বিতল বাড়ীটি রবিন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়িত টেগর লজ।
মহিনী মিল আর টেগর লজের মাঝের মোড়ের পাশে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা কারখানায় ঢুঁমেরে এর অনন্য প্রস্তুত প্রণালী দেখে গরম গরম তিলের খাজার স্বাদ নিয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন:
Pingback: All Banks In Kushtia District | Kushtiainfo